ভূসম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে হারবাং এলাকায়। জমিদার বাবা জ্যোতিষ চন্দ্র দাশের ওয়ারিশ সূত্রে তিনি শুধু হারবাং এলাকায় পেয়েছেন ৩০ কানি ভূসম্পত্তি। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে দীলিপ কুমার দাশ (বর্তমান নাম হুমায়ুন কবির) ৩০ কানি জমির মালিক হলেও সমুদয় তাঁর এই সম্পত্তি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র জবর দখল করে রেখেছে। সম্পদের সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও এই সম্পত্তি এখন পর্যন্ত তাঁর হাতছাড়া। একারণে তিনি জমিদার হয়েও ২৫ বছর কাটিয়েছেন ভাড়া ঘরে। করছেন অসহায়ত্ব জীবনযাপন।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির (৭৮) বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করলেও আমার পরিবার আমাকে সম্পত্তি থেকে মোটেও বঞ্চিত করেনি। আমার পৈতৃক সম্পত্তি বরাবরই আমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সম্পত্তি এখন আমার কাছে নেই, আমার সব জমি একটি প্রভাবশালী চক্রের জবর দখলে রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,আমার ৪ কন্যা ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। অর্থের অভাবে আমার সন্তানদের পড়ালেখা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। এর পরও আমার সম্পত্তি উদ্ধারে আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আদালত আমার সম্পত্তি আমাকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেও দখলবাজরা আদালতের আদেশ অমান্য করে আমার সব জমি জবরদখল করে রেখেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হুমায়ুন কবির ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। ছিলেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর। ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে ছিলো তাঁর ঘনিষ্ঠতা। এমনকি চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের দায়িত্ব পালনও করে ছিলেন তিনি।
একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাঁকে নিজেরমত করেই ব্যবহার করে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তিনি একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। করেছেন দেশ স্বাধীন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামে বাকশাল গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর কাছে পাঠিয়ে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি। বঙ্গবন্ধুর চিঠি পেয়ে চট্টগ্রামে গঠন করে ছিলেন বাকশাল কমিটি। কিন্তু বাকশাল গঠনের অপরাধে সাতকানিয়ায় হয়ে ছিলেন কমরেড সিরাজ সিকদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার। শুধু তাই নয়, এই বাহিনী দিন দুপুরে গুলি করে হত্যা করেছিল তাঁর ভাই লোহাগড়ার রিলিপ বোর্ড়ের চেয়ারম্যান আশুতোষ কুমার দাশকে। আর ওই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বাদী হয়ে কমরেড বাহিনীর প্রধান সিরাজ সিকদারকে প্রধান আসামি করে সাতকানিয়া থানায় জি আর নং ৩৯৬/৭৫ হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ওই সময় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দীলিপ কুমার দাশ (বর্তমান হুমায়ুন কবির) কে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন লাইসেন্সসহ একটি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বন্দুক ও একটি লাল পাসপোর্ট। দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার বেসিক থেকে একটি সুতা ব্যবসায়ী লাইসেন্স।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্বাস ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে স-পরিবারে হত্যা করলে, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওইদিনই চট্টগ্রামের মাটিতে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। একারণে ২১ আগস্ট রাতে তাঁকে
সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে ৫ দিন বন্দী রেখে নির্যাতন চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁদের বাড়িঘর। এসময় তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে তাঁকে দিতে হয় স্বাধীনতার সপক্ষে আর কোনো রাজনীতি না করার মুচলেকা। পরে তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে নিরুপায় হয়ে তিনি চলে যান দেশের বাইরে। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার পর ১৯৮০ সালে নিজ দেশে ফিরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর সেখানেই তিনি এক মুসলিম মেয়েকে বিবাহ করে ৭ নং ওয়ার্ডের মুসলিমপাড়ায় ঘরসংসার সুরু করেন। আর ততদিনেই তাঁর ভূসম্পত্তি তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির যুদ্ধ কালীন সময়ে চিম্বুক পাহাড় থেকে শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ। চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তিনি। ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রমের গ্রুপের ক্যাপ্টেন শামশু ছিলেন এ অঞ্চলের কমান্ডার। দিনে দুপুরে লামা থানা অপারেশন করেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁর নাম নেই! তাঁর কাছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ডকুমেন্টপত্র থাকার পরও এখনো পর্যন্ত তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। অপর দিকে বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তির মালিক হয়েও তিনি আজ অসহায়।
এঘটনায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির তাঁর সম্পদ ও অধিকার ফিনে পেতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।